শামছুল হক ফরিদপুরী (ছদর সাহেব) (১৮৯৮-১৯৬৯) : তিনি টুংগীপাড়া থানাধীন পাটগাতী ইউনিয়নের গওহরডাঙ্গা গ্রামে ১৮৯৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম মো: আব্দুল্লাহ সাহেব এবং মাতা মরহুম আমেনা খাতুন। তিনি প্রখ্যাত আলেম, দার্শনিক, গবেষক, সংস্কারক, সত্য ও ন্যায়ের প্রচারক ছিলেন। দারুল উলুম খাদেমুল ইসলাম গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন দ্বীনি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৯ সালের ২১ শে জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫) :
জন্ম ১৭ মার্চ, ১৯২০ টুংগীপাড়ায়। পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদারীপুর ইসলামিয়া হাই স্কুল, গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুল এবং মথুরানাথ বাবুর মিশন স্কুলে। তিনি ১৯৪২ সালে প্রবেশিকা পাশ করেন। ১৯৪৭ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ হতে বি,এ পাস করেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হলে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে গ্রেফতার হন। এরপর দেশে খাদ্য সংকটের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেফতার হন। ১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে কারাগারে থেকেই জোর সমর্থন দেন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। তিনি প্রাদেশিক সরকারের কৃষি, বন ও সমবায় মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৫৬ সালে আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রী সভায় শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম ও দুর্নীতি দপ্তরের মন্ত্রী হন। ১৯৫৮ সালে দেশে সামরিক শাসন জারি হলে তিনি গ্রেফতার হন। পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর হাত থেকে বাঙালীর স্বার্থ রক্ষার জন্য তিনি ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দাবী ঘোষণা করেন। ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে 'আগরতলা ষড়যন্ত্র' নামে এক মামলায় পুনরায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে দেশের ছাত্র-জনতা। ৬৯ এর গণ-আন্দোলনের চাপে ২২ ফেব্রুয়ারি 'আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা' প্রত্যাহার করে তাঁকে মুক্তি দেয়া হয়। ১৯৬৯ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক তিনি 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৭০ সালে ৭ই ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করার কথা। তৎকালীন সামরিক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে ষড়যন্ত্র করে সংসদ অধিবেশন ডাকার পর স্থগিত ঘোষণা করেন। 'বঙ্গবন্ধু' অসহযোগের ডাক দেন। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দান করেন। এরপর ইয়াহিয়া ও ভুট্রো ঢাকায় এসে গোলটেবিল বৈঠক বসেন। এতে কোন সুরাহা না হওয়ায় ২৫শে মার্চ দিবাগত রাতে সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে । বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল তার অবর্তমানে তাঁকে রাষ্ট্রপতি করে বিপ্লবী সরকার (মুজিবনগর সরকার) গঠন করা হয়। দেশ স্বাধীন হলে তিনি ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।১২ জানুয়ারি ১৯৭২ তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি 'বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ' সংক্ষেপে 'বাকশাল' নামে সর্বদল ভিত্তিক একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং এর চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদ গ্রহণ করেন। তিনি শিল্প কারখানা ব্যাংক, বীমা জাতীয় করণ, রক্ষীবাহিনী গঠন এবং ২৫ বছর মেয়াদী ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি সম্পাদন করেন। ১৯৭৩ সালে বিশ্ব শান্তি পরিষদ তাঁকে 'জুলি ও কুরি' পদকে ভূষিত করে। তাঁর জীবনের ১৩টি বছর কারাগারে কেটেছে। গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন তাঁর রাজনীতির দীক্ষাগুরু। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় ধানমন্ডিস্থ বাস ভবনে একদল বিদ্রোহী সামরিক ঘাতকের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন । দেশের শত শত প্রতিষ্ঠান তাঁর নামের গৌরবময় স্মৃতি বহন করছে।
শেখ ফজিলাতুন্নেসা (১৯৩০-১৯৭৫): শেখ ফজিলাতুন্নেসা ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুংগীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শেখ নুরুল হক এবং মাতার নাম শেখ হোসনে আরা বেগম। তিনি গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকাকালীন সময়ে তিনি মামলা পরিচালনা করা, দলকে সংগঠিত করা ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী হিসাবে সবসময় তাঁর পাশে থেকে তাঁকে অনুপ্রেরণা দান করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ জাতির জনকের গ্রেপ্তারের সময় তিনি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে গৃহবন্দী হন। ১৯৭১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে এলে তিনিও বঙ্গবন্ধুর সাথে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। বিশেষ করে নির্যাতিতা মা-বোনদের সহযোগিতা ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দ্যোগ গ্রহণ করেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে দেশ ও জাতির সেবা করে যান।১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল বিদ্রোহী সামরিক ঘাতকের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন। তাঁর নামে গোপালগঞ্জ শহরে বেগম ফজিলাতুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
মৌলভী আবদুল হাকিম (১৮৮৭-১৯৫৫): জন্ম মুকসুদপুর উপজেলার সুন্দরদী গ্রামে। রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক, সমাজসেবক ও সাংবাদিক । কলকাতার হানাফী, মুসলেম, হিতৈশী, ইসলাম দর্শন পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৩০ সালে অভিভক্ত বাংলার মুসলিম সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। রচিত প্রন্থ পল্লী সংস্কার, বিষাদ লহরী, মিলন, এসকে গোলজার, আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ, প্রতিশোধন, প্রতিদান প্রভৃতি।
আবদুল কাদের খান (১৮৯৭-৯ডিসেঃ১৯৯০): জেলার সবচেয়ে দুর্গম অজপাড়াগাঁ কাশিয়ানীর বরইহাট গ্রামে ১৯৪১ সালে আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। পুলিশ অফিসার ছিলেন। অতি সুফী প্রকৃতির জীবন যাপন করে বেঙ্গল পুলিশের বিশাল বাহিনীতে সকলের শ্রদ্ধা ও খ্যাতি অর্জণ করেন।
বেগম মজিদুন্নেছা (রহঃ)(১৯১৪-১৯৯৫): বেগম মজিদুন্নেছা (রহঃ) একজন বুযূর্গ মহিলা। ইনি ফুরফুরা শরীফের পীর হযরত আবু বকর সিদ্দিক(রহঃ) এর অনুসারী ছিলেন । স্বামীর নাম দলিল উদ্দীন শেখ (মৃত্যু ১৯৩৭ খ্রি:)। তিনি আল্লাহপাকের নৈকট্য প্রত্যাশায় ৬৫ বছর একাগ্রচিত্তে এবাদতে নিয়োজিত থাকেন। প্রতি রমজানের শেষ দশ দিন ইতেকাফ করতেন। তাঁর ইবাদত বন্দিগী ও আধ্যাত্মিক সাধনার কারণে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে বহু মানুষের নৈতিক উন্নয়ন ঘটে। সদর থানার খাটিয়াগড়ে তাঁর কবর রয়েছে।
শেখ হাসিনা (১৯৪৭-) : শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার টুংগীপাড়া গ্রামে বিখ্যাত শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতা শেখ মুজিবুর রহমান । শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি,এ ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি বোষ্টন বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের ওয়াসেডা বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, অষ্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বেলজিয়ামের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্টের ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যের এবার্টি বিশ্ববিদ্যালয়, রাশিয়ার পিপলস্ বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন । শেখ হাসিনা ৩য় , ৫ম, ৭ম , ৮ম ও ৯ম সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ৩য় , ৫ম ও ৮ ম সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন । ৭ম সংসদে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশ, রাজনীতি, গণতন্ত্র ও দারিদ্র্য বিমোচন সংক্রান্ত বাংলা ও ইংরেজিতে অনেক প্রবন্ধ এবং গ্রন্থ প্রণয়ন করেন ।
শেখ সেলিম (১৯৪৯-) : শেখ ফজলুল করিম সেলিম ১৯৪৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি গোপালগঞ্জ জেলার টুংগীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতা মরহুম শেখ নুরুল হক । শেখ ফজলুল করিম সেলিম সেন্টজোসেফ্স হাইস্কুল, খুলনা হতে ১৯৬৩ সালে এস,এস,সি, টেকনিক্যাল কলেজ, ঢাকা থেকে ১৯৬৫ সালে এইচ,এস,সি পাস করেন । তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৮ সাথে বি,এসসি এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭১ সাথে ডিপ্লোমা-ইন-টাটিসটিক্স ডিগ্রি লাভ করেন । তিনি ১৯৮০, ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬ আওয়ামী লীগের মনোনয়েনে জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন । তিনি ৭ম জাতীয় সংসদের মেয়াদকালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ৯ম জাতীয় সংসদে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে সাপ্তাহিক চিত্রালীর সম্পাদক, স্বত্তাধিকারী ও প্রকাশক ।বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ও সাময়িকীতে বিভিন্ন বিষয়ে তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
মুহাম্মদ ফারুক খান (১৯৫১-) : জনাব মুহাম্মদ ফারুক খান ১৯৫১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতা মরহুম সিরাজুল করিম খান (নান্না খান) জনাব মুহাম্মদ ফারুক খান পাকিস্থান সেনাবাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন । তিনি মিলিটারী একাডেমী থেকে স্নাতক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ হতে মাটার্স ইন ডিফেন্স ষ্টাডিজ এবং ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এবং স্টাফ কলেজ মিরপুর হতে কমান্ড এন্ড টাফকোর্স (পি.এস.সি.) ডিগ্রি লাভ করেন । এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রে সামরিক বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন ।তিনি স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জনকল্যাণমূলক সংস্থার সাথে সম্পৃক্ত । তিনি ৭ম, ৮ম ও ৯ম জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি বাণিজ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
মোল্লা জালালউদ্দিন আহমেদ (১৯২৬-১৯৭৯) : মোল্লা জালালউদ্দিন আহমেদ গোপালগঞ্জ জেলার বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সমাজসেবক। তিনি ১৯২৬ সালে বরফা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় ।তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সহপাঠী ছিলেন ।বঙ্গবন্ধুর সাহচর্যে ১৪ বছর বয়সে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়।১৯৪১ সালে তিনি ফরিদপুর সদর মুসলিম ছাত্র লীগের সভাপতি এবং জেলা ছাত্র লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন।১৯৪৩-১৯৪৬ সময়কালে তিনি নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশনের কাউন্সিলর ছিলেন। ১৯৪৮-৪৯ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।১৯৭০ এর সাধারন নির্বাচনে তিনি গোপালগঞ্জ থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পেশাগত জীবনে তিনি ঢাকা সুপ্রীম কোর্টের এডভোকেট ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে তাঁর অবদান অপরিসীম । স্বাধীনতা উত্তর কালে তিনি বঙ্গবন্ধু মন্ত্রীসভায় ডাক,তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ।বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর আওয়ামীলীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে তিনি প্রভূত পরিশ্রম করেন। বঙ্গবন্ধুর আমৃত্যু সহচর,জাতির জন্য নিবেদিতপ্রান এ ব্যক্তিত্ব ১৯৭৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (১৯২৫-১৯৪৭): : জন্ম কলকাতায়। পৈতৃক নিবাস কোটালীপাড়ার উনশিয়া গ্রামে। সাম্যবাদী ও মানবতাবাদী কবি। শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছেন। রচিত গ্রন্থ ছাড়পত্র(১৩৫৪), ঘুম নেই(১৩৫৭), পূর্বাভাষ(১৩৫৭), অভিযান(১৩৬০), হরতাল(১৩৬৯), গীতিগুচ্ছ(১৩৭২)। এই অগ্নিঝরা কিশোর কবির কবিতা প্রকৃতপক্ষে সংগ্রামী মানুষের চিত্তচেতনার সঙ্গে নিত্য একাত্ম।
মথুরানাথ বোস (১৮৪৩-১৯০১) : খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারক, সেন্ট ও মথুরানাথ গীর্জা, মথুরানাথ ইনস্টিটিউট এর প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৫০ সালে তাঁর প্রতিষ্ঠিত মিশন স্কুলের বর্ধিত জায়গায় কায়েদে আযম মেমোরিয়াল কলেজ স্থাপিত করা হয়। ১৯৭৪ সালে কলেজটি সরকারি করার সময় 'বঙ্গবন্ধু কলেজ' নামকরণ করা হয়। গোপালগঞ্জ শহরে শিক্ষা বিস্তারে তাঁর যথেষ্ট অবদান রয়েছে।
রমেশ চন্দ্র মজুমদার (১৮৮৮ জন্ম) : জন্ম মুকসুদপুরের খান্দারপাড় গ্রামে। ১৯১১ সালে ইতিহাসে এম,এ পাস করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার নিযুক্ত হন। ১৯৩৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন। ইতিহাসের উপর বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন।
হরিচাঁদ ঠাকুর (জন্ম ১২২৮-১২৮৪ বাং) : কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি গ্রামে তাঁর লীলাভূমি ছিল । শিশু কাল হতে তাঁর কিছু অলৌকিক কাজ কর্ম দেখে নিম্ন বর্ণের নিপীড়িত মানুষ তাঁকে ভগবানের মর্ত্যলোকে আগমন ভাবতে শুরু করে । তাঁর উদারমন এবং নিম্নবর্ণের হিন্দুদের প্রতি সহানুভূতির কারণে তাঁর ভক্তের সংখ্যা প্রচুর। তাঁর স্মৃতিধন্য ওড়াকান্দি গ্রামে প্রতি বছর চৈত্র মাসে বড়মেলা বসে। তাঁর ভক্তগণ মতুয়া নামে পরিচিত।
ফটিক গোঁসাই (১৮৪২-১৯৫৭) : ফটিক গোসাইর জন্ম গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানার মাইচকান্দি গ্রামে। বাউল সাধক ও লোককবি ছিলেন। অল্প বয়সে সংসার ত্যাগী হন। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তাঁর রচিত গান বাউলদের কন্ঠে শোনা যায়।
মধুসূদন স্বরস্বতী (জন্ম ষোড়শ শতকে): দার্শনিক ও পন্ডিত। সম্রাট আকবরের রাজসভায় সন্মানিত হন। রচিত গ্রন্থ ১২। কোটালীপাড়ার উনসিয়ায় তাঁর পূর্ব পুরুষগণ বসবাস করতেন।
ছবি খাঁ (১৭০০-১৭৭৭) : আলিবর্দী খাঁর সুবেদারি আমলে একজন রাজ কর্মচারী ছিলেন ।পৈতৃক নিবাস কোটালীপাড়ায়। তাঁর পদবী 'কোটাল' থেকে কোটালীপাড়া নাম করণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। বহলতলিতে একটি প্রাচীন মসজিদ আজও তাঁর অবদানের সাক্ষ্য বহন করেছে।
হরিদাস সিদ্ধার্থ বাগাশী (জন্ম ১৮৭৬) : কুড়ি বছর সাধনা করে ৬০ হাজার পৃষ্ঠার মহাভারত বাংলা অনুবাদ করেন ।পৈতৃক নিবাস কোটালীপাড়ায় উনশিয়া গ্রামে। পিতা-গঙ্গাধর বিদ্যাসাগর। রচিত পুস্তক সংখ্যা-৭।
পৃত্থীশ চন্দ্র রায় চৌধুরী (১৮৭০-১৯২৮) : জন্ম সদর থানার উলপুর গ্রামে। পিতা-পূর্ণচন্দ্র রায় চৌধুরী। দীর্ঘকাল ফরিদপুর সেবা সমিতির সভাপতি ছিলেন। ১৯০৫ সালে ইন্ডিয়ান ওয়ার্ল্ড নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। ডিউটিজ; কজেজ এন্ড রিমেডিজ; দি ম্যাপ অব ইন্ডিয়া; লাইফস এন্ড টাইলস অব সি আর দাস প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।
খান বাহদুর রোকন উদ্দিন আহমেদ (১৮৮০-১৯৩৮) : জন্ম কাশিয়ানী উপজেলার ঘোনাপাড়া গ্রামে ।১৯০৪ সালে পুলিশ অফিসার পদে চাকুরীতে প্রবেশের পর একটানা ৩৪ বছর চাকুরী করেন ।সে সময় বহু বেকার যুবকের পুলিশ বিভাগে চাকুরী প্রাপ্তিতে তাঁর অবদান ছিল । ১৯৩৪ সালে খান বাহাদুর উপাধি লাভ করেন ।
খান বাহাদুর মোহাম্মদ ইসলাইল (১৮৮৬-১৯৮১): পৈত্রিক নিবাস কাশিয়ানী থানার ঘোনাপাড়া গ্রামে। তিনি অবিভক্ত বাংলার প্রথম সরকারি উকিল মনোনীত হন। বাগ্মিতা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব ও কর্মনিষ্ঠা জীবিত কালেই তাকে দিয়েছিল কিংবদন্তির মর্যাদা। অনগ্রসর মুসলমান সমাজের জন্য সারা জীবন কাজ করেছেন। ঢাকা হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজ্ঞ হিসেবে জীবনের শেষ পনেরটি বছর কাটিয়ে ৯৫ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।
শেখ মোশাররফ হোসেন (খান সাহেব-১৯০৪-১৯৯১): সমাজসেবার জন্য খান সাহেব উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৫৯ সালে পাকিস্তান সরকারের উপদেষ্টা নিযুক্ত হন । ১৯৬৩ সালে তমগাই কায়েদে আজম খেতাবে ভূষিত হন। ১৯৬৫ সালে এম,এল,এ নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধুর চাচা। ১৯৭২ সালে গণ পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
আবদুস সালাম খান (১৯০৬-১৯৭২): জন্মস্থান বেজড়া, কাশিয়ানী। আইনজীবী, রাজনীতিবিদ। ১৯৩০ সাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম,এ পাস করেন। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক, প্রদেশিক সরকারের মন্ত্রী ও এম,এল,এ ছিলেন।
কাজী দ্বীন মুহাম্মদ (১৯০৯): ১৯০৯ সালে টুংগীপাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯২৯ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজ হতে বি,এ পাস করেন। রচিত পুস্তক 'কেনাই ডাকু', 'ভিজে বিড়াল', পৃথিবীর শিক্ষা ধারার ইতিহাস ইত্যাদি।
কবি আমির হোসেন খান (মৃত্যু ১৯৮৯): পিতার নাম আফসার উদ্দীন খান। নিবাস উরফি, গোপালগঞ্জ। কৃষি কর্মকর্তা ছিলেন। রচিত কাব্যগ্রন্থ-২ খানা।
শের আলী ফকির (মৃত্যু ১৯৮৮): জন্ম কাশিয়ানীর কুসুমদিয়া গ্রামে। সাধক পরশ উল্লাহর দৌহিত্র। মরমী কবি। সাঁঝের তরী, পরশ পাথর তার কাব্যগ্রন্থ।
কবি কাসেম রেজা (১৯১৫-১৯ অক্টোবর ১৯৮৩): জন্ম সদর থানার আড়পাড়া। প্রকাশিত পুস্তক ৫টি- ধুপ, বানের টানে, ঘুন, ভাঙ্গনের গান, দেশ আমার মাটি আমার।
দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের ক্ষেত, হাওড়-বাওড় ও নদ-নদী বিধৌত প্রকৃতির এক অনন্য লীলাভূমি গোপালগঞ্জ জেলা। এ জেলার টুঙ্গীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালী জাতি ছিনিয়ে নিয়ে এসেছিল আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা, সে স্বপ্ন বুকে জড়িয়ে গোপালগঞ্জের মাটিতেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এই গোপালগঞ্জেরই কৃতিসন্তান। গোপালগঞ্জ জেলা ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত।গোপালগঞ্জের উত্তরে ফরিদপুর জেলা, দক্ষিণে পিরোজপুর ও বাগেরহাট জেলা, পূবে মাদারীপুর ও বরিশাল জেলা এবং পশ্চিমে নড়াইল জেলা। গোপালগঞ্জের আয়তন ১৪৮৯.৯২ বর্গকিমি: এবং জনসংখ্যা ১১.৬৫ লক্ষ (প্রায়) । বর্তমানে শেখ ইউসুফ হারুন জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত আছেন।এই ওয়েবসাইটটির মাধ্যমে গোপালগঞ্জ জেলা সংশ্লিষ্ট যাবতীয় তথ্য উপাত্ত জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারব বলে আমরা আশা করি। পাশাপাশি এর মাধ্যমে জেলা প্রশাসক সহ অন্যান্য জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে টেলিফোন এবং ই-মেইলে যোগাযোগেরও সুযোগ থাকছে।গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় এবং দেশে ই-গভর্ন্যান্স কার্যক্রম বাস্তবায়নে আমাদের এ উদ্যোগ সহায়ক বলে আমরা আশা করি।