গোপালগঞ্জ টুঙ্গীপাড়া উপজেলা
(খ) উপজেলার পটভূমি, ইতিহাস ও সংস্কৃতি :-
লাল সবুজের দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। এ দেশেরই দক্ষিণভাগে এক সময়ের স্রোতস্বিনী মধুমতির কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে উপজেলা টুংগীপাড়া। যার বুক জুড়ে রয়েছে কাকের চক্ষু মাজা স্বচ্ছ জলের ধারা বাঘিয়া নদী, রয়েছে মাছে-ভাতে বাঙালির হরেক রকম মাছের আধার বর্ণি বাওড়। আরো আছে নানা রকম ফসল উৎপাদনের জন্য বিস্তীর্ণ বিল ও চরাঞ্চল। তবে সবকিছু ছাপিয়ে রয়েছে দুটি সুগগ্ধি গোলাপ-যার একটি রাজনৈতিক অন্যটি ধার্মিক।
একটি পৌরসভা ও পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মাত্র ১২৭.২৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের টুংগীপাড়া উপজেলার নাম করণে রয়েছে অভিনবত্ব- শোনা যায় পারস্য এলাকা থেকে আগত কতিপয় মুসলিম সাধক অত্র এলাকার প্লাবিত অঞ্চলে টং বেঁধে বসবাস করতে থাকেন এবং কালক্রমে ঐ টং থেকেই নাম হয় টুংগীপাড়া। টুংগীপাড়া উপজেলার উত্তরে রয়েছে গোপালগঞ্জ জেলা সদর,দক্ষিণে ও পশ্চিমে মায়াবতী মধুমতি। মধুমতির অপর পাড়ে রয়েছে ধর্মীয় সাধক পুরুষ মরহুম খানজাহান আলী (রাঃ)এর পূণ্য ভূমি বাগেরহাট জেলার চিতলমারী ও মোল্লারহাট উপজেলা। আর পূর্বে রয়েছে কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের আদি তীর্থ ভূমি গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলা। আয়তনে ছোট এবং নামে অভিনবত্ব থাকলেও বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টুংগীপাড়ায় রয়েছে গৌরবদীপ্ত ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
এলাকার মানুষের প্রধান উপজীবিকা কৃষি। তবে চাকুরীজীবি ও ব্যবসায়ীর সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়। তবে সাধারণ ভাবে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ততটা ভাল নয়। কারণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বরাবরই টূংগীপাড়া অবহেলিত। ফলে এখানে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা তেমন জোরালো ভাবে বা দৃঢ়ভাবে গড়ে উঠেনি।
ফরিদপুর, মাদারীপুর, পিরোজপুর ও বাগেরহাটের নিকটবর্তী এলাকা হওয়ায় অত্র এলাকার মানুষের আঞ্চলিক ভাষা অনেকটা মিশ্র প্রকৃতির। গানের মাধ্যমে অত্র এলাকার ভাষা প্রকৃতি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়-
"বেয়ান বেলা কোয়ানে গ্যালা ও ছাওয়ালের মা
আল চষতি যাব আমি ভাত দিয়া যা
মুঠ্যা শুগোতি দিচ্ছি আমি তুমি চিল্লাও ক্যা
আল ব্যাচা টাহা নিয়া হাটে যাবানি
হলদ্যা একখান কাপুড় তোরে কিন্যা দিবানি
তোমার দ্যায়া নাগবে নানে কিন্যা নিবানি
আমি মুঠ্যা ব্যাচা টাহা দিয়া বিন্যা নিবানি
তা অলিতো বাল অবেনে থামি নিকবানি
আমি থামি কিনবানি
স্বাত্তপর এমন বিটার ঘর আমি করি
ইচ্চে অয় চল্যা যাই বাপের বাড়ি
যাতি যদি পারতি তুই কবে চল্যা যাতি
আমার মত বাজান আর দেবে নানে খাতি
খাওয়ার খোটা দিলি তুই ওরে হালোর বিটা
এহনই দিলাম আমি বাপের বাড়ি হাটা
কি করিস তুই করিস কি ও ছাওয়ালের মা
ভাত দেয়া নাগবেনা তুই মুঠ্যা শুগোতি যা
হু............................................উ।"
নদীতে মাছধরার অপরূপ দৃশ্য
(গ) উল্লেখযোগ্য স্থান :
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স,গওহরগাঙ্গা জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম খাদেমুল ইসলাম মাদ্রাসা
(ঘ)উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়-
০১। কার্যালয়/প্রতিষ্ঠানের নামঃ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, টুংগীপাড়া, গোপালগঞ্জ।
০২। প্রতিষ্ঠানকাল ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ ১৯৮৩ ইং।
০৩। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে প্রতিষ্ঠান প্রধানগণের নামের তালিকা ও কার্যকাল :
০৪। কাজের পরিধিঃ (চার্টার অব ডিউটিজ) উপজেলার উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডের মধ্যে (ক)মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রস্ত্তত করন, খ) মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, গ) জেনারেল সার্টিফিকেট কেস নিস্পত্তি করন,(ঘ) স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা পরিদর্শণ ও অন্যান্য কাজ সম্পাদন,(ঙ) মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক, বিধবাভাতা বিতরণে সহযোগিতা, (চ) কাবিখা, কাবিটা ও ১০০ দিনের কর্ম পরিচালনা, (ছ) এডিপি জ) ইউনিয়ন/উপজেলা/সংসদ নির্বাচনের যাবতীয় কর্মকান্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা, (ঞ) নারী ও শিশু নির্যাতন রোধে সহায়তা প্রদান, (ট) কৃষি ও মৎস্য খাতের উন্নয়নে সহযোগিতা প্রদান, (ঠ) ভুমি ব্যবস্থাপনায় সক্রিয়ভাবে যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন, (ড) আইন-শৃংখলা বিষয়ক কার্যক্রম, (ঢ) এনজিও বিষয়ক কার্যক্রম তদারকি সহ উপজেলা পর্যায়ে সকল বিভাগের সার্বিক সমন্বয় সাধন ও সহযোগিতা প্রদান ।
০৫। এতদকালে সম্পাদিত গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলীঃ উপজেলা উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের তদারকি, ইউনিয়ন/উপজেলা/সংসদ নির্বাচনের যাবতীয় কর্মকান্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা।
১। আয়তন : ১২৭.২৫ বর্গকিলোমিটার
২। মোট জনসংখ্যা : ৮৯,৫৬৮ জন ।
পুরুষ- ৪৯,৪০০জন
মহিলা-৪৫,৪৪০ জন।
৩। ঘনত্ব- : ১০১২ (প্রতি বঃ কিঃমিঃ)
৪। নির্বাচনী এলাকা- : ২১৭, গোপালগঞ্জ-৩ (কোটালীপাড়া ও টুংগীপাড়ার অংশ)
৫। মোট জমির পরিমাণ : ১২,৭২৫ হেক্টর।
আবাদী জমি- ১০০৭৬ হেক্টর।
একফসলী - ৩৯৯৫ হেক্টর।
দুই ফসলী - ৪৬৩১ হেক্টর।
তিন ফসলী - ১৪৫০ হেক্টর।
৬। মোট পরিবারের সংখ্যা : ১৭০৪০ টি।
৭। পৌরসভা : ১ টি।
৮। ইউনিয়নের সংখ্যা : ৫ টি।
৯। মোট গ্রামের সংখ্যা : ৬৯ টি।
১০। ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সংখ্যা : ৩ টি।
১১। মৌজা সংখ্যা : ৩৪ টি।
১২। মহাবিদ্যালয়ের সংখ্যা : ২ টি।
১৩। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা : ১৫ টি।
১৪। নিম্ন-মাধ্যমিক বিদ্যালয় : ৩ টি।
১৫। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় : ৪২ টি।
১৬। বেসরকারী প্রাথমিক : ২৩ টি।
১৭। অস্থায়ী রেজিঃ প্রাঃ বিদ্যাঃ : ০২ টিঃ
১৮। কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় : ৯ টি।
১৯। হাট-বাজার : ০৭ টি।
২০। হাসপাতালের সংখ্যা : ২ টি।
২১। খাদ্য গুদামের সংখ্যা : ৩ টি।
২২। মসজিদের সংখ্যা : ১৩৬ টি।
২৩। মন্দিরের সংখ্যা : ২৪৩ টি।
২৪। পর্যটন মোটেল : ১ টি।
২৫। রেষ্ট হাউজ : ৩ টি।
২৬। অডিটরিয়াম : ০১ টি।
২৭। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ: ০১ টি।
২৮। মাদ্রাসার সংখ্যা : ২ টি।
২৯। দুঃস্থ শিশু প্রশিক্ষন কেন্দ্র : ১ টি।
৩০। যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র : ১ টি।
৩১। উপজেলা রিসোর্স সেন্টার : ০১ টি।
৩২। ব্যাংকের সংখ্যা : ১০ টি
৩৩। এন, জি , ও : ৮ টি।
৩৪। ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ ও গওহর ডাঙ্গা মাদ্রাসা।
১. বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব-
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (রাজনীতিবিদ ও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট), শেখ হাসিনা (রাজনীতিবিদ ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী), শেখ ফজলুল করিম সেলিম (রাজনীতিবিদ ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী), ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপশ ( রাজনীতিবিদ ও ঢাকা- ১২ সাংসদ)
বঙ্গবন্ধু সমাধি সৌধ,টুঙ্গীপাড়া
টুঙ্গীপাড়ার বিশেষত্ব -
টুঙ্গীপাড়ার বিশেষত্ব -
প্রশাসন টুঙ্গিপাড়া থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করে ১৯৯৫ সালে। টুঙ্গিপাড়া পাটগাতী ইউনিয়নের অন্তর্গত একটি গ্রাম। বর্তমানে টুঙ্গিপাড়া একটি থানা সদর। ১৯৬৪ সালে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয় গিমাডাঙ্গা টুঙ্গিপাড়া উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয়। ১৯৬৬ সালে গিমাডাঙ্গা আইডিয়াল জুনিয়ার হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। শিক্ষাবিস্তারে এ স্কুল দুটির ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। বর্তমানে এখানে একটি কলেজ রয়েছে,যার নাম শেখ মুজিবুর রহমান মহাবিদ্যালয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫) এই গ্রামে জন্মগ্রহণ করে। ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট তাকে সপরিবারে হত্যা করে খুনীরাই তাঁর মরদেহ এখানে সমাহিত করে। তাঁর জন্মদিনে (১৭ মার্চ) এই স্থান উৎসবে পরিণত হয়। তাঁর মহাপ্রয়াণ দিনে জাতীয় শোকদিবসের মূল অনুষ্ঠান এখানে পালিত হয়। এটি এখন বাঙালির তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। টুঙ্গিপাড়ার পাশেই বিখ্যাত পাটগাতী বন্দর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-র এক স্মৃতিমূলক রচনায় টুঙ্গিপাড়ার চমৎকার বর্ণনা পাওয়া যায় :-
নদীর (বাইগার) পাড় ঘেঁষে কাশবন, ধান-পাট-আখ ক্ষেত, সারিসারি খেজুর, তাল-নারকেল-আমলকি গাছ, বাঁশ-কলাগাছের ঝাড়, বুনো লতা-পাতার জংলা, সবুজ ঘন ঘাসের চিকন লম্বা সতেজ ডগা। শালিক-চড়ুই পাখিদের কলকাকলি, ক্লান্ত দুপরে ঘুঘুর ডাক। সব মিলিয়ে ভীষণ রকম ভালোলাগার একটুকরো ছবি যেন। আশ্বিনের এক সোনালি রোদ্দুর ছড়ানো দুপুরে এই টুঙ্গিপাড়া গ্রামে আমার জন্ম। গ্রামের ছায়ায় ঘেরা, মায়ায় ভরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ এবং সরল-সাধারণ জীবণের মাধুর্যের মধ্য দিয়ে আমি বড় হয়ে উঠি। আমাদের বসতি প্রায় দুশো বছরের বেশি হবে। সিপাহি বিপ্লবের আগে তৈরি করা দালান কোঠা এখনও রয়েছে। আমাদের আত্মীয়-স্বজনরা সেখানে বসবাস করেন। তবে বেশির ভাগ ভেঙ্গে পড়েছে, সেখানে সাপের আখড়া।নীলকর সাহেবদের সঙ্গে আমাদের পূর্বপুরুষদের অনেক গোলমাল হতো। মামলা মোকদ্দমা হয়েছে। ইংরেজ সাহেবদের সঙ্গেও গন্ডগোল লেগেই থাকতো। একবার এক মামলায় এক ইংরেজ সাহেবকে হারিয়ে জরিমানা পর্যন্ত করা হয়েছিল। ইতিহাসের নীরব স্বাক্ষী হয়ে সেই ভাঙা দালান এখনও বিধ্বস্ত অবস্থায় রয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকসেনাবাহিনী ঐ দালানের ওপর হামলা চালিয়েছিলো। আমার দাদা-দাদীকে রাস্তায় বসিয়ে রেখে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিলো। আমার দাদার একটি বড় নৌকা ছিলো, যার ভেতরে দুটো ঘর ছিলো। জানালাও ছিলো বড় বড়। নৌকার পেছনে হাল,সামনে দুই দাঁড় দেখতে আমার বড় ভালো লাগতো। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় সেই নৌকা ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে যায়। শৈশবের ফেলে আসা সেই গ্রাম আমার কাছে এখনও যেন সুবাসিত ছবির মতো। আমার বাবার জন্মস্থানও টুঙ্গিপাড়ায়। তিনি এখন ঐ গ্রামের মাটিতেই ছায়াশীতল পরিবেশে ঘুমিয়ে আছেন। তার পাশেই আমার দাদা-দাদীর কবর। যারা আমার জীবণকে অফুরন্ত স্নেহমমতা দিয়ে ভরিয়ে তুলেছিলেন,আজ আমার গ্রামের মাটিতেই তারা মিশে আছে। ১৯৭৫-এর ১৫ আগষ্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে আমার মা, বাবা, ভাই ও আত্মীয়-পরিজন অনেককে হারাই। দেশ ও জাতি হারায় তাদের বেঁচে থাকার সকল সম্ভাবনা,আশা-আকাঙ্খার স্বাধীন সত্তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ঘাতকের দল বাংলার প্রাণকেন্দ্র ঢাকা থেকে সরিয়ে সেই মহাপুরুষকে নিভৃতে পল্লীর মাটিতেই কবর দিয়েছে। ইতিহাসের পাতা থেকে তাকে মুছে ফেলার ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়েছে- কিন্তু পেরেছে কি?’’
(খ) উপজেলার পটভূমি, ইতিহাস ও সংস্কৃতি :-
লাল সবুজের দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। এ দেশেরই দক্ষিণভাগে এক সময়ের স্রোতস্বিনী মধুমতির কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে উপজেলা টুংগীপাড়া। যার বুক জুড়ে রয়েছে কাকের চক্ষু মাজা স্বচ্ছ জলের ধারা বাঘিয়া নদী, রয়েছে মাছে-ভাতে বাঙালির হরেক রকম মাছের আধার বর্ণি বাওড়। আরো আছে নানা রকম ফসল উৎপাদনের জন্য বিস্তীর্ণ বিল ও চরাঞ্চল। তবে সবকিছু ছাপিয়ে রয়েছে দুটি সুগগ্ধি গোলাপ-যার একটি রাজনৈতিক অন্যটি ধার্মিক।
একটি পৌরসভা ও পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মাত্র ১২৭.২৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের টুংগীপাড়া উপজেলার নাম করণে রয়েছে অভিনবত্ব- শোনা যায় পারস্য এলাকা থেকে আগত কতিপয় মুসলিম সাধক অত্র এলাকার প্লাবিত অঞ্চলে টং বেঁধে বসবাস করতে থাকেন এবং কালক্রমে ঐ টং থেকেই নাম হয় টুংগীপাড়া। টুংগীপাড়া উপজেলার উত্তরে রয়েছে গোপালগঞ্জ জেলা সদর,দক্ষিণে ও পশ্চিমে মায়াবতী মধুমতি। মধুমতির অপর পাড়ে রয়েছে ধর্মীয় সাধক পুরুষ মরহুম খানজাহান আলী (রাঃ)এর পূণ্য ভূমি বাগেরহাট জেলার চিতলমারী ও মোল্লারহাট উপজেলা। আর পূর্বে রয়েছে কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের আদি তীর্থ ভূমি গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলা। আয়তনে ছোট এবং নামে অভিনবত্ব থাকলেও বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টুংগীপাড়ায় রয়েছে গৌরবদীপ্ত ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
এলাকার মানুষের প্রধান উপজীবিকা কৃষি। তবে চাকুরীজীবি ও ব্যবসায়ীর সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়। তবে সাধারণ ভাবে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ততটা ভাল নয়। কারণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বরাবরই টূংগীপাড়া অবহেলিত। ফলে এখানে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা তেমন জোরালো ভাবে বা দৃঢ়ভাবে গড়ে উঠেনি।
ফরিদপুর, মাদারীপুর, পিরোজপুর ও বাগেরহাটের নিকটবর্তী এলাকা হওয়ায় অত্র এলাকার মানুষের আঞ্চলিক ভাষা অনেকটা মিশ্র প্রকৃতির। গানের মাধ্যমে অত্র এলাকার ভাষা প্রকৃতি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়-
"বেয়ান বেলা কোয়ানে গ্যালা ও ছাওয়ালের মা
আল চষতি যাব আমি ভাত দিয়া যা
মুঠ্যা শুগোতি দিচ্ছি আমি তুমি চিল্লাও ক্যা
আল ব্যাচা টাহা নিয়া হাটে যাবানি
হলদ্যা একখান কাপুড় তোরে কিন্যা দিবানি
তোমার দ্যায়া নাগবে নানে কিন্যা নিবানি
আমি মুঠ্যা ব্যাচা টাহা দিয়া বিন্যা নিবানি
তা অলিতো বাল অবেনে থামি নিকবানি
আমি থামি কিনবানি
স্বাত্তপর এমন বিটার ঘর আমি করি
ইচ্চে অয় চল্যা যাই বাপের বাড়ি
যাতি যদি পারতি তুই কবে চল্যা যাতি
আমার মত বাজান আর দেবে নানে খাতি
খাওয়ার খোটা দিলি তুই ওরে হালোর বিটা
এহনই দিলাম আমি বাপের বাড়ি হাটা
কি করিস তুই করিস কি ও ছাওয়ালের মা
ভাত দেয়া নাগবেনা তুই মুঠ্যা শুগোতি যা
হু............................................উ।"
নদীতে মাছধরার অপরূপ দৃশ্য
(গ) উল্লেখযোগ্য স্থান :
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স,গওহরগাঙ্গা জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম খাদেমুল ইসলাম মাদ্রাসা
(ঘ)উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়-
০১। কার্যালয়/প্রতিষ্ঠানের নামঃ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, টুংগীপাড়া, গোপালগঞ্জ।
০২। প্রতিষ্ঠানকাল ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ ১৯৮৩ ইং।
০৩। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে প্রতিষ্ঠান প্রধানগণের নামের তালিকা ও কার্যকাল :
ক্রমিক নং | নাম | কার্যকাল | |
হতে | পর্যন্ত | ||
০১ | মোঃ রজব আলী | ১৭/১১/৮৩ | ১০/০২/৮৫ |
০২ | মোঃ শামসুল হক | ১০/০২/৮৫ | ৩০/৭/৮৮ |
০৩ | মোঃ আজমল হোসেন | ৩০/৭/৮৮ | ০৫/৩/৯০ |
০৪ | মোঃ বারেক উল্লা খান | ০৫/৩/৯০ | ০৪/৮/৯১ |
০৫ | এম এ মান্নান মোল্লা (ভারপ্রাপ্ত) | ০৪/৮/৯১ | ০২/১০/৯১ |
০৬ | মোঃ মুজিবুর রহমান মিয়া | ০২/১০/৯১ | ০৪/১০/৯২ |
০৭ | মোঃ আব্দুন নূর | ০৪/১০/৯২ | ২১/৪/৯৬ |
০৮ | কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী | ২১/৪/৯৬ | ১৫/০২/২০০১ |
০৯ | ধীরেন্দ্র চন্দ্র দাস (অতিরিক্ত দায়িত্ব) | ১৫/০২/২০০১ | ০৭/৬/২০০১ |
১০ | মনোজ কান্তি বড়াল | ০৭/৬/২০০১ | ৩০/৭/২০০৪ |
১১ | মোঃ গিয়াস উদ্দিন মোগল (অতিরিক্ত দায়িত্ব) | ৩০/৭/২০০৪ | ২৬/৭/২০০৪ |
১২ | মোঃ সওকত আকবর | ২৬/৭/২০০৪ | ১৯/১০/২০০৫ |
১৩ | মুহম্মদ আলমগীর কবির খান | ১৯/১০/২০০৫ | ০৭/৫/২০০৬ |
১৪ | মোঃ গিয়াস উদ্দিন মোগল (অতিরিক্ত দায়িত্ব) | ০৮/৫/২০০৬ | ২০/৬/২০০৬ |
১৫ | মোঃ ইমরুল চৌধুরী | ২০/৬/২০০৬ | ২২/৭/২০০৭ |
১৬ | খোন্দকার মোঃ নাজমুল হুদা শামিম | ২২/৭/২০০৭ | ২৯/৪/২০০৯ |
১৭ | মোঃ সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী | ২৮/৪/২০০৯ | চলমান |
০৪। কাজের পরিধিঃ (চার্টার অব ডিউটিজ) উপজেলার উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডের মধ্যে (ক)মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রস্ত্তত করন, খ) মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, গ) জেনারেল সার্টিফিকেট কেস নিস্পত্তি করন,(ঘ) স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা পরিদর্শণ ও অন্যান্য কাজ সম্পাদন,(ঙ) মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক, বিধবাভাতা বিতরণে সহযোগিতা, (চ) কাবিখা, কাবিটা ও ১০০ দিনের কর্ম পরিচালনা, (ছ) এডিপি জ) ইউনিয়ন/উপজেলা/সংসদ নির্বাচনের যাবতীয় কর্মকান্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা, (ঞ) নারী ও শিশু নির্যাতন রোধে সহায়তা প্রদান, (ট) কৃষি ও মৎস্য খাতের উন্নয়নে সহযোগিতা প্রদান, (ঠ) ভুমি ব্যবস্থাপনায় সক্রিয়ভাবে যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন, (ড) আইন-শৃংখলা বিষয়ক কার্যক্রম, (ঢ) এনজিও বিষয়ক কার্যক্রম তদারকি সহ উপজেলা পর্যায়ে সকল বিভাগের সার্বিক সমন্বয় সাধন ও সহযোগিতা প্রদান ।
০৫। এতদকালে সম্পাদিত গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলীঃ উপজেলা উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের তদারকি, ইউনিয়ন/উপজেলা/সংসদ নির্বাচনের যাবতীয় কর্মকান্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা।